৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

মব সন্ত্রাসের ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ বিশিষ্টজনের

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫

অনলাইন নিউজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মব ভায়োলেন্সের (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজন ও শিক্ষাবিদরা। তারা বলেছেন, এক অন্যরকম পরিস্থিতিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) এসেছে। গতানুগতিক নির্বাচন করলে কী হবে, তা সবার কাছে অনুমেয়। পোস্টাল ভোটিং ও সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্য নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারও চাপের মুখে শাপলা প্রতীক কোনো দলকে না দেওয়া এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু না করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে সংলাপে।

গতকাল রোববার নির্বাচন ভবনে বিশিষ্টজন ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে দুই দফায় সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।

স্বাগত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনাদের মতামত ইসির কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আপনাদের পরামর্শ আমাদের পথ চলায় সাহায্য করবে।’

প্রবাসীর জন্য আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি জানান, দেশের ভেতরে ভোটে নিয়োজিত ১০ লাখের বেশি লোকবলের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা, আইনি হেফাজতে থাকা লোক ভোট দিতে পারবে, যা এবারের নির্বাচনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির পর্যবেক্ষক ও ভোটার হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ইসির সংলাপ উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ইসির বড় চালেঞ্জ ও অর্জনের বিষয় হচ্ছে সফল নির্বাচন করা। এর সফলতার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে।’

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার উপলব্ধি, এবারের নির্বাচনে ক্যাম্পেইন অনলাইনে হবে ৮০ শতাংশ। এর জন্য ইসি কতটুকু প্রস্তুত? মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, এআই জেনারেটেড তথ্য আসবে। নির্বাচনের আগেই অনেক উত্তেজনা তৈরি করবে সামাজিক মাধ্যম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘জাতি হিসেবে অর্জন থাকার পরও ৫৪ বছরে ক্ষমতার ট্রানজিশন ঠিক করতে পারিনি। তিনজন সাবেক প্রধান বিচারপতির পরিণতি আপনারা দেখেছেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিণতি আপনারা দেখেছেন। পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা নেই। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করা ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার জানান, ‘এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারলে ইতিহাসের পাতায় ইসির নাম লেখা থাকবে।’

সরকার পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্র পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে তিনি জানান, ইসির অনেক লোকবল রয়েছে, যারা প্রশিক্ষিত। আমলাদের বাইরে রেখে নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পিআর পদ্ধতির বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি না করে কোনোভাবে এর পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার মত তাঁর।

টিআইবি পরিচালক বদিউজ্জামান জানান, হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কার্যকর ব্যবস্থা ও আচরণবিধি প্রয়োগের দুর্বলতা রয়েছে। নির্বাচনী ব্যয় তদারকি ও প্রকাশের বিষয়ে ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘না’ ভোটের বিধান শুধু একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনে ব্যবস্থা রাখা জরুরি।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আব্দুল ওয়াজেদ জানান, মাঠ প্রশাসনে ডিসি ও ইউএনওর নিয়ন্ত্রণ থাকে। ইসি কর্মকর্তারা সেই নিয়ন্ত্রণ থেকে কীভাবে প্রভাবমুক্ত হবেন, তা ভাবতে হবে। মবও তৈরি হয়ে যেতে পারে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ভোটের আগে-ভোটের সময় এবং ভোটের পরে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। দেশে ৫১ শতাংশ নারী, অথচ আসন পাঁচ থেকে ৭ শতাংশ। নারীদের নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ থাকতে হবে।

সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘একটা পক্ষকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ধরে নিলাম, তারা নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনে বসেছে, তাদের মধ্যে যদি কেউ মনে করেন যে, পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বা আমরা জিতব না, সুতরাং আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। তাহলে কী পরিস্থিতি হবে, আপনারা ভেবে দেখুন।’

সাবেক লেফট্যানেন্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান বলেন, ভোটের আগে বাহিনীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হবে।

অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান বলেন, আস্থা অর্জনই প্রধান সমস্যা। এটা তৈরি করা ইসির প্রধান দায়িত্ব। আইনিভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিকে প্রমাণ করতে হবে।

জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, জাতীয় প্রতীক শাপলা বিশেষ দলের চাওয়া, চাপ এবং নানা ধরনের অপচেষ্টার সামনে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় থেকেছে।

বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন, আইনের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো গেলে ভালো নির্বাচন দিয়ে ইসি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকতে পারবে।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জায়িফ রহমান বলেন, নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ইসি দৃশ্যমান উদ্যোগ নিলে জনগণের ভরসা বাড়বে।

নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহ্‌মদ বলেন, জনসংখ্যা নিয়ে বিবিএসের ডেটা প্রশ্নবিদ্ধ।

দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে নির্বাচনে গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা বাড়াতে ইসিকে পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ।

24 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন