আপডেট: জুন ২, ২০২১
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ নিখোঁজের ছয় দিন পর বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর গ্রামের ধানক্ষেত থেকে বগুড়ার কলেজছাত্রী নাজনীন আক্তারের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২ জুন) বেলা ১২টায় গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় এ ঘটনায় গ্রেফতার সাকিব হোসেনের পলাতক বাবা-মাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। নাজনীন আক্তার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম (উত্তরপাড়া) এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের মেয়ে। তিনি বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহমেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
অভিযুক্ত সাকিব জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের ঝাড়ুদার। সে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক আব্দুর করিম হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস করে সাকিবের পরিবার।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘বুধবার সকাল ১০টায় বাটাজোর এলাকা থেকে এক ব্যক্তি মোবাইলে জানান সেখানকার একটি ধানক্ষেতে বস্তা পড়ে রয়েছে। তা থেকে মারাত্মক দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেই বস্তা থেকে উদ্ধার করা হয় নাজনীন আক্তারের মরদেহ।’
ওসি আরও জানান, মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নাজনীনের পরিবারের সদস্যদেরও খবর দেওয়া হয়েছে। তারাও বগুড়া পুলিশের সঙ্গে রওনা হয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার এসআই গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ঘটনার পর দুই দিন বাড়িতে অবস্থান করছিল সাকিব।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময়ে সে তার বাবা-মাকে হত্যার বিষয়টি জানিয়ে দেয়। এমনকি সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলার কথা বলে। সাকিব বগুড়ায় চলে যাওয়ার পর তার বাবা-মা সেখান থেকে সরিয়ে ফেলায় মরদেহের সন্ধান মেলেনি। তবে সেখান থেকে নাজনিনের ব্যবহৃত ওড়নাসহ মরদেহের কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। অভিযান চলাকালে সাকিবের বাবা-মাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তারা আগেই পালিয়েছে। এখন তাদের গ্রেফতারের কাজ চলছে।’
গ্রেফতার সাকিব স্বীকারোক্তিতে বলে, ‘মোবাইল ফোনে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরপর গত বছর ২৩ আগস্ট বগুড়ার একটি পার্কে আমরা দেখা করে বিয়ের দিন ঠিক করি। ৩০ সেপ্টেম্বর নাজনীনের বাড়িতে আমাদের বিয়ে হয়। নাজনীনের খালু আমাদের বিয়ে পড়ান। বিয়েতে আমার ঠিকানা গোপন রাখি।
এ বছর ২৪ মে বগুড়ার চারমাথা থেকে নাজনীনকে বরিশালে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার বাবা-মা বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানতো না। তারা নানাবাড়িতে অবস্থান করার সুযোগে আমি নাজনীনকে বাড়িতে তুলি। তার আগে নাজনীনকে জানিয়েছিলাম, বাবা অসুস্থ, এ সুযোগে বাড়িতে গেলে কোনও সমস্যা হবে না।
নাজনীন বাড়িতে গিয়ে আমাদের টিনের ঘর এবং ওয়াশরুম দেখে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এমনকি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এতে নাজনীনের ওপর আমার প্রচ- রাগ হয়। এরপর তাকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দিই।’
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কে সাকিব নাজনীনকে বিয়ে করে। কিন্তু প্রেম ও বিয়ের সময় নাজনীনকে সে ভুল তথ্য দেয়। সে জানায়, তারা আর্থিকভাবে অনেক সচ্ছল। এর একপর্যায়ে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিব ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কলেজছাত্রী নাজনীনকে বিয়ে করে। ২৪ মে নাজনীনকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর হত্যা করে সাকিব।