১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

করোনার দুঃসময়ে জনগণের পাশে নেই জনপ্রতিনিধিরা

আপডেট: এপ্রিল ২৩, ২০২১

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে দ্বিতীয় দফার ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ জারি করা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে শহরে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও গ্রামে লকডাউনের কোন প্রভাবই চোখে পড়েনি। বরিশালের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের বাজারগুলোতে আগের মতোই মানুষের উপস্থিতি রয়েছে। তবে রাস্তা-ঘাটে বেশি দেখা গেছে নিন্ম আয়ের মানুষদের। টানা দুই সপ্তাহের এ লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষ। তবে এবারের লকডাউনে এসব নিন্ম আয়ের মানুষের পাশে জনপ্রতিনিধি বা ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানের কাউকে দাড়াতে দেখা যায়নি।

নি¤œ আয়ের এসব মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা দুই সপ্তাহের এ লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষ। অনেকের ঘরে নেই ঠিকমতো তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা। বাধ্য হয়েই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে যেতে হচ্ছে তাদের। চরম অসহায়ত্বের মধ্যে রয়েছেন শহরের ভাসমান জনগোষ্ঠী। খাবারের সন্ধানে শহরের মোড়ে মোড়ে ভিড় করছেন তাদের অনেকে।

বিগত বছর লকডাউনে সরকারি সহযোগিতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ব্যাক্তি উদ্যোগে অসহায় মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছেন। করোনায় মৃতদের লাশ দাফনও করেছেন কেউ কেউ। করোনা প্রতিরোধকসামগ্রী মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন।

বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদেরই মাঠে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তৎপরতা ছিল। কিন্তু এবার কারো তৎপরতা নেই খুব একটা। এমনকি মানুষকে সচেতন করতেও নেই কোনো বেসরকারি উদ্যোগ। লকডাউন বাস্তবায়নে শুধু পুলিশই তৎপর। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশকে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা গত বছর খাবারসামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তালিকা করে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। ঢাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদেরও কেউ কেউ মাঠে ছিলেন। মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও খাবার ও করোনা প্রতিষেধকসামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবছর কারও তৎপরতা নেই। যা আছে তাও নামমাত্র। রমজান মাস চলায় এ সংকট আরো প্রকট হয়েছে। সরকারি ত্রাণও সে রকম দেয়া হচ্ছে না।

তবে হতদরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য স্বল্প ও ন্যায্য দামে বরিশালে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি। লকডাউন ও রমজানে টিসিবির পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু তাও ডিলারদের প্যাকেজ বিড়ম্বনায় কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের।

চরবাড়িয়া এলাকার আসমত আলী বলেন, “এই করোনার মধ্যে আমরা ঘর দিয়া বাইর না হইলে খামু কি? না খাইয়া মরতে হইবে। আমাগো এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যান কেউ আমাগো খবর লয় না। কয়দিন আগে নির্বাচন আছিলো দেইখ্যা পোষ্টার লইয়া আমাগো ধারে আইয়া বইয়া থাকতো, ভোটের লইগ্যা আকুতি মিনুতি করতো কিন্তু এই কষ্টের মধ্যে কেউ একটু খবর লয় না আমাগো।’

চরবাড়িয়া ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) মামুন আকন বলেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনমূলক কথা বলছি, মসজিদে যাতে সামাজিক দূরত্ব মানা হয় সেটির কথা বলছি। তবে অসহায় মানুষদের সহযোগীতা দেয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদূত্তর দিতে পারেনি।

শুধু চরবাড়িয়া ইউনিয়নই নয় বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নগুলোর অবস্থা প্রায় একই। বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের দিনমজুর মোবাক্কের চাপরাশী জানান, ‘সরকার লকডাউন দেছে কিন্তু মোরা এহন পর্যন্ত কোন সাহায্য সহযোগীতা পাই নাই। চেয়ারম্যানের ধারে আজীবন সাহায্যের লইগ্যা গ্যালে কিছু পাইতাম না আবার করোনার মধ্যে কি পামু!

মাধবপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, ‘আমি সকালে বের হই আর ইফতারের আগে আসি, বাইরে শুধু মানুষের সেবাই করি।সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন সহযোগীতা পাই নাই, পেলে অবশ্যই অসহায় মানুষদের মাঝে দেওয়া হবে।”

অপরদিকে বরিশাল সদর উপজেলা ও বরিশাল সদর আসনের বিগত নির্বাচনে বিভিন্ন দলীয় মনোনায়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদেরও দেখা মিলছে না লকডাউনে সাধারন মানুষের পাশে থেকে খাদ্য সহায়তা ও অর্থিকভাবে সহযোগীতা করার জন্য।

সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধিরা বলেন, লকডাউনে সাধারন মানুষের কি শুধু সরকারই সহযোগীতা করবে আর কারো কোন দায়িত্ব নেই? অনেক বিত্তবানরা নির্বাচনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন কিন্তু দেশের এই মহামারীর মধ্যে অহসায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সরকারের পাষাপাশি যদি সবাই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের দেশে লকডাউন কোন মানুষকে না খেয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হবে না।

এদিকে গত ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর আমি দরিদ্র-নিন্মবিত্ত মানুষের সহায়তার জন্য কার্যক্রম নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। পল্লী অঞ্চলে কর্মসৃজনের জন্য ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ এবং রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬৭২ কোটির বেশি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। এতে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে থাকারও নির্দেশ দেন।

186 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন