১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার

শিরোনাম
চট্টগ্রাম-১১ আসনে অসুস্থ বিএনপি নেতার পাশে ইসরাফিল খসরু বুধবার থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ৮ কুকুরছানাকে হত্যা, অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সরকারি বাসা ছাড়ার নির্দেশ বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তিন বাহিনীর প্রধান শাস্তি পেতে হবে শিক্ষকদের, কঠোর অবস্থানে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া’র সুস্থতা কামনায় বরিশালে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন: ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন মানিকগঞ্জে শুরু হয়েছে খেঁজুরের রস আহরণের প্রস্তুতি দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই জিয়া পরিবারের শক্তি : তারেক রহমান

প্রাথমিক শিক্ষা: জাতির ভিত্তি গঠনের প্রথম ধাপ

আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২৫

রাসেল ইকবাল

একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিশুদের ওপর। আর সেই ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। এটি শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও নৈতিক বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে। শুধু সাক্ষরতা অর্জন নয়, একজন সচেতন, মূল্যবোধসম্পন্ন ও কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার গোড়াপত্তন হয় এই পর্যায়েই।

বাংলাদেশে শিক্ষা এখন মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। সরকার ‘প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক’ ঘোষণা করেছে এবং এই খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। বর্তমানে প্রায় শতভাগ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে, শতভাগ পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে এবং উপবৃত্তি ও মিড-ডে মিল কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে। তবুও মানসম্মত শিক্ষা এবং ঝরে পড়া রোধ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক উদাহরণগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারে।

ফিনল্যান্ড, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রশংসিত শিক্ষা ব্যবস্থার অধিকারী। সেখানে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষায় পরীক্ষা বা র‌্যাঙ্কিংয়ের চাপ ছাড়াই শেখে। বিদ্যালয়গুলোকে আনন্দদায়ক ও শেখার উপযোগী পরিবেশে রূপ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকতাকে সেখানে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

জাপানে শিশুদের প্রথম ছয় বছরে মূলত শৃঙ্খলা, সৌজন্য, সম্মান ও সামাজিক আচরণ শেখানো হয়। ‘শিক্ষা মানেই শুধু বই মুখস্থ করা নয়’—এই চিন্তাকে তারা বাস্তবায়ন করেছে সমাজজীবনের প্রাথমিক ধাপেই।

দক্ষিণ কোরিয়া শিক্ষা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে ১৯৬০-এর দশকের পর দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে সবার জন্য সহজলভ্য এবং মানসম্মত করার মাধ্যমে তারা প্রযুক্তিনির্ভর মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পেরেছে।

অন্যদিকে, ব্রাজিল দারিদ্র্য-পীড়িত এলাকায় শিক্ষা নিশ্চিত করতে চালু করে Bolsa Família কর্মসূচি—যেখানে দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়, যদি তারা নিয়মিত সন্তানদের স্কুলে পাঠায়। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ও উপস্থিতি অনেক বেড়েছে।

সিঙ্গাপুর শিক্ষক প্রশিক্ষণকে কেন্দ্রীয়ভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। সেখানে শিক্ষক নিয়োগ হয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে, এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হয়েছে।

বাংলাদেশেও কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি সত্ত্বেও বেশ কিছু জায়গায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন—গ্রামীণ ও শহরের মধ্যে মানের বৈষম্য এবং পাঠদান পদ্ধতির দুর্বলতা। এছাড়া, শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ দারিদ্র্য। এটি সমাধানে শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়, সমাজের সামগ্রিক অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শিশুদের স্কুলমুখী করতে স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও, মিডিয়া এবং অভিভাবকদের একযোগে কাজ করতে হবে।

এখানে আরও একটি বিষয় জরুরি—বিদ্যালয়কে শিশুর জন্য ‘আকর্ষণীয় স্থান’ হিসেবে তৈরি করা। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতি, লাইব্রেরি এবং কমিউনিটি ইনভলভমেন্ট জরুরি।

আমরা যদি জাতিকে দক্ষ, মানবিক, মূল্যবোধসম্পন্ন ও উদ্ভাবনী শক্তিতে ভরপুর করে গড়ে তুলতে চাই, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। উন্নত বিশ্বের শিক্ষা কাঠামো থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে, আমাদের প্রেক্ষাপটে উপযোগী করে মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আনন্দময় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন। তথ্যসূত্রঃ দৈনিক সমকাল।

125 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন