১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় গুমের মতো অমানবিক ঘটনা ঘটে: তারেক রহমান

আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট ঃবিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জোরপূর্বক গুম একটি বৈশ্বিক সমস্যা, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বিশেষ করে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটে।

গতকাল শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ বাণী দেন।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন বা ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এ ধরনের নির্দয় কৌশল ব্যবহার করে থাকে। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে নজিরবিহীন গুমের ঘটনায় দেশবাসীর মতো আমিও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্ভরযোগ্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো একযোগে প্রকাশ করেছে যে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সাত শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গুম করেছে। এটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। আজ পর্যন্ত একটি গুমের ঘটনারও ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি। তবে আশার কথা যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে যাতে আর কোন দিন গুমের ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’- এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।

তিনি বলেন, হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো ছিলেন তাদের পরিবারের প্রাণপ্রিয় সদস্য। তাদের স্বপ্ন, ভালোবাসা ও সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অদৃশ্য মানুষগুলো কোথায় আছে আমরা জানি না, তবে রেখে গিয়েছে এক মর্মান্তিক ও বেদনাবিধুর বাংলাদেশ, যেখানে আমাদের অর্জিত মানবাধিকার ও মূল্যবোধ লুণ্ঠিত হয়েছে। গুম আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। আইসিসি এর রোম সনদের গুমকে মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, আর মানবাধিকারের এই লঙ্ঘনের জন্য ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। গুমের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবার তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে পারে না এবং বিচার পাওয়ার অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, আমি এই মনুষ্যত্বহীন অপরাধে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য দুনিয়াজুড়ে ঐক্য ও সংহতির আহ্বান জানাই।

আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে, বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি যেন গুম না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য, আমরা জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত গুম প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেশন (আইসিপিপিইডি) অনুসারে যথাযথ আইন প্রণয়ন করবো ইনশাল্লাহ। মানবতার বিরুদ্ধে এই হিংস্র গুরুতর অপরাধের ন্যায়বিচার হতেই হবে।”

একই দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বাণী দেন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী গুমের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ, স্মরণ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাতে বিশ্বজুড়ে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে আমি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দু:শাসন ছিল গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে পরিপূর্ণ। পতনের পূর্বে আওয়ামী আমলে বাংলাদেশে গুমের আতঙ্ক বিরাজমান ছিল। দুঃশাসন থেকে উৎপন্ন হয় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতা বিরোধী নৃশংসতা। মূলত হিংস্র্র স্বৈরাচারী সরকারের হাতেই গুম হয় সবচেয়ে বেশি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দিয়ে বিরোধী দলের প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে অদৃশ্য করা ছিল আওয়ামী শাসনের অনুষঙ্গ। এরা বিরোধী দল ও মতের মানুষদের অল্পদিন অথবা দীর্ঘদিন কিংবা চিরদিনের জন্যে নিখোঁজ করে দেয়। প্রায় দেড় দশক ধরে ৭০০ এর অধিক মানুষকে বলপূর্বক গুম করা হয়েছে। এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু ও চৌধুরী আলম এর মতো জনপ্রতিনিধিসহ বিএনপি’র অসংখ্য ছাত্র-যুবকদের এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিখোঁজ করা রয়েছে। লক্ষ্য ছিল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিরোধী কণ্ঠকে নির্মূল করা। গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারদের যথাযথ পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং গুমের শিকার নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিকতার সাথে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। একইসাথে গুমের জন্য দায়ী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জড়িত প্রত্যেক কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।সূত্র:আমার দেশ

66 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন