আপডেট: মে ১৮, ২০২১
এম.কে. রানা ॥ ‘শান্তিপূর্ণ বরিশালকে অশান্তির দিকে ঠেলে দিবেন না। আমি এখানে ভেসে আসেনি। বরিশাল আওয়ামী লীগ পূর্বের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। বরিশালে অশান্তির সৃষ্টি হলে সে দায়ভার আপনাদেরকেই নিতে হবে।
সোমবার (১৭ মে) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় নগরীর কালিবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে বরিশালের পুলিশ প্রশাসনকে কড়া ভাষায় মেয়র এ হুশিয়ারী দিয়েছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট এ.কে.এম জাহাঙ্গীরসহ মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি-সম্পাদক এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভার শেষ দিকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য রিপন বিশ্বাসকে গ্রেফতারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন মেয়র সাদিক।
এসময় তিনি পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যারা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে আন্দোলন করছে, প্রপাগন্ডা ছড়াচ্ছে তাদের পক্ষ নিয়ে আপনারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হেনস্তা করছেন। রাতের আধারে তাদের বাড়িতে রেড দিয়ে গ্রেফতার করছেন। আর যারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন। এ অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ তৃনমূলের দল। আমরা পুলিশি ক্ষমতায় চলিনা, আমরা তৃণমূলের ক্ষমতায় চলি। আপনারা যা করছেন সেটা দলের জন্য বদনাম।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে মেয়র আরও বলেন, ‘আগে মানুষ বলত বরিশাল নাকি বিএনপি’র ঘাটি। সেই ঘাটি আজ কোথায়। শিক্ষক পেটানোর মতো ঘৃণিত ঘটনাও এ বরিশালে ঘটেছে। এরা কারা, যারা একাজগুলো করেছে তারা আওয়ামী লীগের ভালো চায় না। বলতে দ্বিধা নেই বরিশাল আজ আওয়ামীলীগের ঘাটি। শান্তিপূর্ণ বরিশালে এখন আর গুন্ডামি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দোষগুন থাকবে। তাই বলে অভিযোগ পেলেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন, ধরে নিয়ে যাবেন, সেটা চলবে না। আপনারাই যদি সব করেন তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কেন এখানে দায়িত্ব দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন।
প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আমি অপরাধ করিনা, অপরাধের প্রশ্রয়ও দেই না। এর আগে আপনারা দেখেছেন দলের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তাকে আমি নিজে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। তাই বলব আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী অপরাধ করলে এবং তার যথেষ্ট প্রমাথ থাকলে আমাদের বলুন। দলের কেউ অপরাধ করলে আমরাই তাকে আপনাদের হাতে তুলে দিবো। আমাদের সাথে কথা না বলে একটি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও মামলা নিবেন না।
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে মেয়র সাদিক প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনাদের কাজ আমাদের এবং জনগণের সহযোগিতা করা। তা না করে আপনারা আওয়ামী লীগের বদনাম করছেন। কিসের ভিত্তিতে আপনারা এগুলো করছেন? আপনারা হয়তো একদিন বরিশাল থেকে চলে যাবেন। কিন্তু এখানে আমরাই থাকবো। বরিশালকে শান্তিপূর্ণ আমাদেরই রাখতে হবে। এমন কিছু করবেন না যাতে দলের ক্ষতি, সংগঠনের ক্ষতি করতে আসবেন না।
বিরোধী পক্ষের সমালোচনা করে মেয়র বলেন, ‘আমি হাওয়ায় ভেসে আসিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এই সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। তার স্বাক্ষরেই আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। বিগত দিনের তুলনায় এখনকার মহানগর আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। সুতরাং আমাকে নিয়ে প্রপাগন্ডা ছড়াবেন না। রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে, তাই বলে নোংরামি করতে আসবে না।
তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘আমার অন্যায় হলে তার প্রমাণ দিন। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বলছেন, যতটুকু বলছেন ততটুকুই করছি। আমাকে সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না বলে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের বলব, আমার বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। আমি লোক ফান্ড দিয়েই নগরবাসীকে খুশি করবো। আপনারা ডান-বাম করলে সেই ক্ষতিটা আমার হয় বরিশালবাসীরই হবে।
উল্লেখ্য রবিবার (১৬ এপ্রিল) রাতে চাঁদবাজির মামলার প্রধান আসামি মহানগর আওয়ামী লীগের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রিপন বিশ্বাসকে (৩৫) কাশিপুর ভূঁইয়া বাড়ি সড়ক থেকে গ্রেফতার করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। এর প্রতিবাদে গত সোমবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর সোয়া একটা পর্যন্ত বরিশাল এয়ারপোর্ট থানা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ও তাদের সহযোগিরা। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতর মুক্তির জন্য আল্টিমেটাম দেয় বিক্ষুব্ধরা।