২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

গলিতে জনসমাগম, চলাচল নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা চায় পুলিশ

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:: ‘মাস্ক পরে কী হবে? করোনা হওয়ার থাকলে এমনিতেই হবে। আল্লাহ যেদিন নেবে, সেদিন চলে যেতেই হবে। এসব সামজিক দূরত্ব দিয়ে কিছু হবে না’- করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে এসব কথা বলছিলেন ঢাকার ফুটপাতে আনারস বিক্রেতা ছোটন মিয়া।

চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন বন্ধ ও চলাচল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অলিগলিতে বাড়ছে মানুষের ভিড়। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। যে যার যার মতো অবাধে চলাফেরা করছে। মুখে নেই মাস্ক। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের রীতিও। গলিগুলোতে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন স্থানীয়রা।

এমনই তিন তরুণ মাসুদ, সিজান ও রাফি। জানতে চাইলে রাফি বলেন, ‘সারাদিন বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে এসেছি। এখন কলেজ বন্ধ। পড়াশোনার চাপ নেই। বিকাল পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে ঘুরবো। সন্ধ্যায় ইফতারের সময় বাসায় ফিরবো।’

কেউ কেউ মাস্ক পরে বের হলেও, সংশয় একা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী হবে? এমনই একজন জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আশপাশে কেউ তো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সবাই মিলে সচেতন না হলে করোনা কোনোদিন যাবে না। একটা জিনিস কিনতে গেলে আরও তিনজন এসে গায়ে পড়ে।’ এ অবস্থায় কীভাবে স্বাস্থবিধি রক্ষা পাবে- এমন প্রশ্ন জাহিদুলের।

রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, পাইকপাড়া ও ৬০ ফিট এলাকায় মোড়ে মোড়ে বসেছে কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যে অস্থায়ী দোকান।

এদিকে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন বন্ধ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে পুলিশ। এরমধ্যে অনেকেই নিয়ম ভেঙে বাইরে বের হচ্ছেন। এসময়ে পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। তবে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দফতর বলছে, জরিমানা করায় অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে একতরফাভাবে পুলিশের ওপর দায় চাপিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। চলতি বিধিনিষেধের বাইরে সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় জরিমানা করেছেন পুলিশ সদস্যরা। জরিমানা আরোপকারী পুলিশ সদস্যের এতে ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই।

পুলিশ চেকপোস্টে অনেক সরকারি দফতরের কর্মকর্তা ও মিডিয়া কর্মী পরিচয়পত্র দেখাতে অনীহা প্রদর্শন করছেন। পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া পুলিশের দায়িত্বেরই অংশ। একে হয়রানি মনে না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মি‌ডিয়া অ্যান্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স) মো. সো‌হেল রানা স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, অনেক মানুষ নিয়ম ভেঙে বাইরে বেরিয়েছেন। অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদে বাইরে বেরোনোর স্বপক্ষে উপযুক্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক সম্মানিত নাগরিক মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে পরিচয়পত্র প্রদর্শনেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তীব্র অনীহা দেখাচ্ছেন। অনেকে ব্যর্থ হচ্ছেন পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে। সরকারি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো কোনো ব্যক্তি নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন।

বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। ১৪ এপ্রিল ভোর হতে ২১ এপ্রিল মাঝরাত পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধের স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে সার্বক্ষণিক রাস্তায় রয়েছেন। পাশাপাশি, চলমান রয়েছে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিয়মিত দায়িত্ব পালনও। বিনাকারণে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।

করোনাকালে মানুষের মুভমেন্ট ও কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। জনকল্যাণে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে আইজিপির নির্দেশে জনস্বার্থে ১৩ এপ্রিল চালু হয়েছে মুভমেন্ট পাস। মুভমেন্ট পাস গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয় এবং সরকার ঘোষিত জরুরি সেবায় নিয়োজিত কতিপয় পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য এই পাসের প্রয়োজন নেই, যা উদ্বোধনের দিন প্রেস ব্রি‌ফিংয়ে স্পষ্ট করা হ‌য়ে‌ছে। জরুরি কাজে যাতায়াতকারী ব্যক্তি পুলিশ চেকপোস্ট অতিক্রমের সুবিধার্থেই এই পাস সংগ্রহ করছেন।

মুভমেন্ট পাস চালু হওয়ায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়েছে, যা করোনার ভয়ানক সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারি নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের সব পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

সোহেল রানা বলেন, পেশাগত বৈচিত্র্যের কারণে পুলিশের দায়িত্ব পালন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশকে সহায়তা করা প্রয়োজন। তাই করোনাকালে দেশের স্বার্থে ও মানুষের জীবন রক্ষার্থে ও করোনার বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশের কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত কাঁচাবাজারের জিনিসপত্র বিক্রির নির্দেশনা আছে। এই সময় কিছুটা মানুষের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে। তবু যেন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।

181 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন