২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর আজ, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২৫

অনলাইন নিউজঃ ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর আজ। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আধিপত্যবাদী চক্রের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। এরপর থেকে জাতি এই দিবসটি পালন করে আসছে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শপথ গ্রহণ এবং সামরিক বাহিনী ও জনগণের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি’র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে পাল্টে দিতে ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে। কয়েক দিনের জন্য বাংলাদেশ সরকারশূন্য অবস্থায় পড়ে যায়। জনগণ নিমজ্জিত হয় চরম হতাশা ও আতঙ্কে। তাদের পরম আস্থার উৎস সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করে রাখেন অভ্যুত্থানকারীরা। তবে জাতির এক ক্রান্তিকালে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করার এক শঙ্কা ও নৈরাশ্যের দুর্যোগে ৬ই নভেম্বর মধ্যরাতের পর বিপ্লবী সৈনিকদের কামানের গোলার গর্জন কুচক্রীদের সব চক্রান্ত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সকালের উদ্ভাসিত সূর্যালোকে ঢাকার রাজপথে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য- ট্রাকে ট্রাকে সৈনিকরা আকাশের দিকে গুলিবর্ষণ করে তাদের বিজয়ের কথা জানান দিতে থাকেন। সৈনিক ও জনগণ অভূতপূর্ব আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়। সেনা ট্যাঙ্কে ফুলের মালা পরিয়ে জনগণ সিপাহী বিপ্লবকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। রেডিওতে আবার জিয়ার কণ্ঠস্বর ‘আমি জিয়া বলছি’ শুনতে পায় দেশবাসী। ৭ই নভেম্বরের চেতনা সব ধরনের জাতিঘাতী এবং রাষ্ট্রঘাতী অপকৌশলের বিরুদ্ধে এক শাণিত হাতিয়ার।

গত ৪৯ বছরের অধিকাংশ সময় দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হয়েছে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দিবসটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা বাতিল করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারো এই দিনে সরকারি ছুটি বহাল করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি দেশ জুড়ে জরুরি আইন জারি এবং ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৬ সালের সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ওই বছর দিনটিতে সরকারি ছুটি বহাল ছিল। পরের বছর ২০০৮ সালে তা ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ২০০৯ সাল থেকে দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হচ্ছে না।

৭ই নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আবারো চক্রান্তের গোপন পথে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা প্রায় ১৬ বছর গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রক্ষমতাকে হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে রাখে। এদের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতাকর্মীদেরকে বীভৎস নির্মমতায় দমন করেছে। আয়নাঘর, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ দুর্নীতি ও অপশাসনের এক ভয়াল রাজত্ব কায়েম করেছিল।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বহু বছর মুক্তি দেয়া হয়নি। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের মুক্তির পথ প্রসারিত হয়েছে। এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের চর্চার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালাতে সুযোগ দিয়েছিল। তাই আমি মনে করি, ৭ই নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র বিনির্মাণ করতে হবে। আর সেজন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। বিএনপিসহ জামায়াতে ইসলামী, এলডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই দিবসটিকে জাতীয়ভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছে।

কর্মসূচি: ৭ই নভেম্বর সকাল ৬টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় প্রতাকা উত্তোলন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে এদিন সকাল ১০টায় দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে ৭ই নভেম্বর বেলা ৩টায় নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এদিনই সারা দেশে বিএনপি’র উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন স্ব স্ব উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে। শ্রমিক দলের উদ্যোগে গত বুধবার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, ছাত্রদলের উদ্যোগে আগামীকাল শনিবার আলোচনা সভা এবং ৭ ও ৮ই নভেম্বর টিএসসিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ওলামা দলের উদ্যোগে ৯ই নভেম্বর এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, তাঁতী দলের উদ্যোগে ১০ই নভেম্বর আলোচনা সভা, কৃষক দলের উদ্যোগে ১১ই নভেম্বর আলোচনা সভা, জাসাসের উদ্যোগে ১৩ই নভেম্বর শহীদ মিনারে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে ১২ই নভেম্বর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা।

এ ছাড়া ১৩ই নভেম্বর পর্যন্ত ডকুমেন্টারি (ভিডিও, স্থিরচিত্র) ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়াসহ ফেসবুক, ইউটিউব, অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়াও ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে দলটি।
তথ্যসূত্রঃমানবজমিন

34 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন