২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

নির্বাচনি মাঠে বিএনপির পাশে থাকবে মিত্ররা

আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২৫

অনলাইন নিউজঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে নির্বাচনি হাওয়া। প্রস্তুতি নিচ্ছে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর আসন ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। এমন অবস্থায় যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জুলাই আন্দোলনসহ গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার দলগুলোকে এক কাতারে আনতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচনেও মিত্রদের ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে চান তিনি। মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও তারেক রহমানের অবস্থানকে সমর্থনের পাশাপাশি নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে পাশে থাকার সায় দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর মিত্র ৪২টি দলের সঙ্গে ২ দিন পৃথকভাবে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে বিএনপি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন বর্জন করা আরও ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করার কথা রয়েছে আরেক রহমানের। নির্বাচনসহ জাতীয় ইস্যুতে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগামী নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তাদের কথা শুনছেন। বিগত সময়ের আন্দোলনে মিত্র দলগুলোর ভূমিকা ছিল। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী দিনে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সমমনা, মিত্রদল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতারাও বিএনপির সঙ্গে থেকে রাজনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান। তাদের সঙ্গে রেখে আরও কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়-তা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেবেন।

জানা যায়, শুক্র ও শনিবার রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৪২ দলের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাও এতে অংশ নেন। তখন নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আসছে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা অভিন্ন তথ্য দিয়ে যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়েছে। এ জন্য বিগত সময়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন তিনি। ৩১ দফা নিয়ে সবাইকে জনগণের কাছে যাওয়ার কথা বলেছেন। বৈঠকে মিত্রদলগুলোর নেতারাও যুগপৎ আন্দোলনের মতো আগামী নির্বাচনে বিএনপির পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা যোগ্য নেতাদের নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার কথাও বলেন কয়েকজন মিত্র নেতা। আগামী নির্বাচনে আসন ও সরকার গঠনে যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়নের প্রত্যাশার কথাও জানান তারা। সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ পর্যায়ে দেশের ৬৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি দল রয়েছে, যারা বিগত সরকারের আমলে নির্বাচন বর্জন করেছিল। এছাড়া ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠন হওয়া এনসিপিসহ আরও ৪টি দলের সঙ্গে এই বৈঠক অনানুষ্ঠানিকভাবে হতে পারে। এ ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ৪২ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার যুগান্তরকে বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে লড়াই করেছি। এই ঐক্য অটুট রাখতে হবে। আগামী দিনেও যে কোনো ভাবে ঐক্য ধরে রাখব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে অনেকেই বলেছেন যে, আগামী নির্বাচনে সবাই মিলে যাতে এক থাকা যায়। একসঙ্গে কাজ করা যায়। তবে উনার (তারেক রহমান) দিক থেকে উনিও বলেছেন, এ ব্যাপারে আমাদের ঐক্যটা ধরে রাখতে হবে। আগামী নির্বাচন ও সরকার গঠনেও আমরা একসঙ্গে থাকব।

শনিবার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছি, আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। এখন থেকে নিয়মিত আমরা বসব। আলোচনা হবে। আন্দোলনের সময় যে বোঝাপড়াটা, এখনকার পরিস্থিতি ও আগামীতেও যেন বোঝাপড়াটা অব্যাহত থাকে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে ২০১২ সাল থেকে জোটে আছি। ২০২২ সালে জোট ভেঙে গেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন যারা বিএনপির সঙ্গে মিলে কর্মসূচি পালন করছে, তাদের নিয়ে আগামীতে পথ চলবেন। সে প্রেক্ষিতে যুগপৎভাবে আন্দোলনে ছিল এলডিপি। আগামী নির্বাচনে জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন তো আলাপ-আলোচনা চলছে। জোট হোক বা না হোক, আমরা যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম আমাদের তালিকা তাদের (বিএনপি) কাছে আছে। উনার (তারেক রহমান) কাছ থেকে যে আশ্বাস আমরা পেয়েছি, এটা আমরা সবাই আশা করি-একসঙ্গে মিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। যোগ্য প্রার্থীর মূল্যায়ন করবেন তিনি। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নতুন প্রজম্মের জন্য একটা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ব। বিএনপিও এটাই চায়। বিগত সময়ে আমরা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলাম, এখনো আছি। আগামী দিনেও থাকব।

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নানা নির্যাতন সহ্য করেছি। লোভ-লালসা ত্যাগ করে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অতীতের মতোই আগামী দিনেও আমাদের নিয়ে একসঙ্গে চলতে চান। কাজ করতে চান। আমরাও নির্বাচনি মাঠে বিএনপির পাশে থাকব। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া ৪২টি দলের মধ্যে রয়েছে-১২ দলের সমন্বয়ে ১২ দলীয় জোট, ১১ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লেবার পার্টি, চার দলীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, এনডিএম, জনঅধিকার, পিপলস পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, আমজনতা দল।সূত্রঃদৈনিক যুগান্তর

86 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন