২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর

আপডেট: মে ১৪, ২০২১

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সমগ্র দেশে মহামারির কারণে মানুষের ঈদ উৎসবের আমেজ অনেকটাই বিবর্ণ। তারপরও আজ শুক্রবার মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন—পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে, চিরায়ত যে ধারা প্রচলিত, গত বছরের মতো এ বছরও তা পুরোপুরি বিপরীত। বৈশ্বিক মহামারির কারণে এবার ঈদ উদযাপন হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এ বছর ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করা হয় মসজিদে।

সরকারের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, মহামারিকালের এ ঈদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাইরে না গিয়ে ঘরে থেকে পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কাটাতে হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

করোনাকালের এসব বাধা বিপত্তির পরেও আজ শুক্রবার দেশব্যাপী পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ

ঢাকাঃ
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনাভাইরাসজনিত মহামারির কারণে এবারও জাতীয় ঈদগাহে হচ্ছে না ঈদের জামাত।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজে অংশ নেন সর্বস্তরের মানুষ। এবার বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশে ছিল পুলিশি কড়াকড়ি। মাস্ক পরা ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুনাশক নিশ্চিত করে মুসল্লিদের প্রবেশ করানো হয় মসজিদে। ঈদগাহের পরিবর্তে জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হওয়া এই ঈদ জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

সব ভেদাভেদ ভুলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসুল্লিরা ঈদের এই জামাতে নামাজ আদায় করেছেন। খুতবা শেষে মোনাজাতে দেশ ও বিশ্ব মুসলমানের শান্তি, সমৃদ্ধি, করোনা মহামারি থেকে পরিত্রাণের কামনা ও দোয়া করা হয়।

 

বরিশালঃ

সরকারি নির্দেশনা অনুসারে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশাল জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নগরের কালেক্টরেট জামে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করেন। শুক্রবার (১৪ মে) সকাল ৮টায় কালেক্টরেট মসজিদের ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মসজিদে ঢোকার আগ মুহূর্তে মুসল্লিদের জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়, দেয়া হয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আলহাজ হাফেজ মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম জামাতে ইমামতি করেন। তিনিসহ সব মুসল্লিরা মাস্ক পরেছিলেন।

এছাড়া, নগরীর বিভিন্ন মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনার প্রভাবে এবার ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সংখ্যা ছিলো অন্যান্য যেকোনো বছরের থেকে তুলনামূলক অনেক কম।

নগরীর এবায়েদুল্লাহ জামে মসজিদের প্রথম জামাতের ইমামতি করে মির্জা মাওলানা নুরুল রহমান বেগ, ঈদের চারটি জামাত এ অনুষ্ঠিত হয়।

নগরীর অন্যান্য মসজিদে কোথাও তিনটি ও কোথাও দুইটি করে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে করোনা থেকে রক্ষার জন্য দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া মোনাজাত করা হয়।

 

নগরীর ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়া বাগানবাড়ি জামে বায়তুল্লাহ মসজিদে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত। এছাড়া খান বাড়ি জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। ঈদের নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা এবং মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষায় মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মোঃ জাকির হোসেন।

 

বরিশাল নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ডের তাজকাঠি, জিয়া সড়ক, টিয়াখালী, সিকদার বাড়িসহ সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকায় ‍আজ সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ডের তাজকাঠি এলাকার হাজিবাড়ি জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন নামাজে ইমামতি করেন।

 

এদিকে বরিশালের ৬টি উপজেলার কিছু গ্রামে আজ আগাম পবিত্র ঈদ-উল ফিতর পালিত হয়েছে। বরিশালের কিছু গ্রামে বসবাসরত চট্টগ্রামের চন্দনাইশ শাহসুফি দরবার শরিফ, সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার শরিফ এবং আহমাদিয়া জামাত অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন।

জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার অনুসারীসহ জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জের সুন্দরকাঠী, মহানগরীসহ সদর উপজেলার প্রায় ৫ হাজার অনুসারী প্রতি বছরের ন্যায় এবারও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেছে।

 

খুলনাঃ
খুলনায় ঈদের প্রধান ও প্রথম জামাত সকাল ৮টায় টাউন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় উন্মুক্ত স্থানে কোনো ঈদের জামাত হয়নি।

টাউন জামে মসজিদে প্রধান জামাতে ইমামতি করেন খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় এবং তৃতীয় ও শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সাড়ে ৮টায় কোর্ট জামে মসজিদ, বাইতুন নুর মসজিদ, ডাকবাংলা মসজিদ, আলিয়া মাদ্রাসা মসজিদসহ খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় এবং জেলার নয়টি উপজেলা মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঝালকাঠিঃ
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঝালকাঠিতে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদের খতিব মুফতি গাজী মাওলানা শহিদুল ইসলাম এতে ইমামতি করেন।

একই স্থানে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জামাত। তৃতীয় জামাত হয় সাড়ে ৮টায়। জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী ও পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষ এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

এ ছাড়া পুলিশ লাইন, উপজেলা পরিষদ, নেছারাবাদসহ জেলার পাঁচ শতাধিক জামে মসজিদ ও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে ঈদুল ফিতরের প্রধান ও প্রথম জামাত সকাল ৮টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। একইস্থানে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহর পেশ ইমাম মাওলানা নূর মুহাম্মদ সিদ্দিকী।

এ ছাড়া লালদীঘি শাহী জামে মসজিদে প্রথম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে এবং দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে। এ ছাড়া নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রাহ্মনবাড়িয়াঃ
সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়েছে। মসজিদগুলোতে একাধিক জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় শহরের মসজিদ রোডে জেলা জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় এবং সাড়ে ৯টায় তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসক ও জেলা জামে মসজিদের সভাপতি হায়াত উদ দৌলা খান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব সভাপতি রিয়াজউদ্দিন জামিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মুসল্লিরা অংশ নেন। এতে ইমামতি করেন জেলা জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা সিবগাতুল্লাহ নূর।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মসজিদ রোডে আজ সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে জেলা সদর হাসপাতাল মসজিদ, টেংকের পাড় জামে মসজিদ, শেরপুর জামে মসজিদ, কুমারশীল মোড় মদিনা মসজিদ, কালাইশ্রী পাড়া মকবুল জামে মসজিদসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন মসজিদে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাধিক জামাতে মুসল্লিরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন।

সিলেটঃ
সিলেটে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে। এ ছাড়া সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ঐতিহ্যবাহী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টা, সকাল সাড়ে ৮টা ও সকাল সাড়ে ৯টায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের তিনটি জামাত, কালেক্টরেট জামে মসজিদে সকাল ৭টা, ৮টা, ৯টা ও সর্বশেষ সকাল ১০টায় মোট চারটি জামাত এবং বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সাড়ে ৮টায় একটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঈদের প্রধান জামাত হযরত শাহজালাল (র.) জামে মসজিদে অংশ নেন।

ময়মনসিংহঃ
ময়মনসিংহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় জেলার আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠ জামে মসজিদে। মসজিদের বাইরে ঈদগাহ মাঠেও নামাজ আদায় করেন বিপুল মুসল্লি। এতে ইমামতি করেন কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মসজিদে প্রবেশের দুটি ফটকেই মুসুল্লিদের তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। জামাতে অংশ নেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান ও জেলা প্রশাসক এনামুল হক।

এ ছাড়া শহরের বড় মসজিদ,আকুয়া মার্কাজ মসজিদ, চরপাড়া জামিয়া ইসলামিয়া, পুলিশ লাইন জামে মসজিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

277 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন