৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

বরিশালে লকডাউনে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে নিন্ম আয়ের মানুষ

আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২১

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
মহামারী করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের ৭ম দিন আজ মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল)। সরকারি নির্দেশনা মেনে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, অফিস আদালত, গণপরিবহন। কিছু কিছু রিক্সা ও ইজিবাইক চললেও যাত্রী সীমিত। এমতাবস্থায় কাজ হারিয়ে বেকার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষরা। কেউ কেউ খাদ্যাভাব পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে কাজে বের হলেও আয়-রোজগার একদম নেই বলছেন তারা। করছেন মানবেতর জীবনযাপন। কোনও সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতাও পাচ্ছেন না তারা।

এদিকে আজ সর্বাত্মক লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল (বুধবার) মধ্যরাত পর্যন্ত চলমান লকডাউন বহাল থাকবে। ফলে খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে আশংকা করছেন শ্রমিক নেতারা। তাদের দাবী, নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য অর্থ বরাদ্দ, রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক।

ফলে পেটের তাগিদে লকডাউন উপেক্ষা করেই সড়কে নেমেছে। কিন্তু বাধ সেধেছে ট্রাফিক পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর নতুনবাজার ও কাকলীর মোড়ে একাধিক রিক্সা থামিয়ে সেগুলো উল্টো করে রেখে দিয়েছে পুলিশ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বেশকিছু রিক্সাচালককে সাথে নিয়ে উপস্থিত হন বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। পরে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে রিক্সাগুলো ছেড়ে দেয়া হয়।

জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সরকার গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ও সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার ঘোষিত লকডাউন ৭ম দিন চললেও এ লকডাউন মানতে গিয়ে বরিশাল নগরীর সড়কগুলোতে চলাচলকারী রিক্সাচালক ও দিনমজুররা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

কাউনিয়া এলাকার রিক্সাচালক শাহআলম বলেন, “৫জনের সংসারে তিনি একাই উপার্জনকারী ব্যাক্তি। লকডাউনের মধ্যেও পেটের তাগিদে বের হয়েছেন। তবে সড়কে পুলিশ তাদেরকে আটকে দিচ্ছে। কোন কোন স্থানে আবার রিক্সার চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, গত ৬ দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১ থেকে দেড়শ টাকা আয় করেছেন। কিন্তু তা দিয়ে তার সংসার চলেনা।

রাস্তার ধারে কোদাল ও খ্যাচা নিয়ে বসে থাকা ভাটিখানার জমির আলী বলেন, লকডাউন তো আর পেট বোঝে না। গত তিনদিনে তিনি কোন কাজ না পেয়ে দুপুরের পরই বাসায় ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, গত লকডাউনে অনেকেই ত্রাণ দিলেও এবার কেউ ত্রাণ দেয়নি।

লাকুটিয়ার বাসিন্দা মাহিন্দ্রা চালক ইউনুস মুঠোফোনে বলেন, লকডাউনে কোনো কাজ না থাকায় বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন তিনিসহ অনেক চালক। কিন্তু পেটতো অলস না, সেতো যথা সময়ে খাবার চায়। এভাবে লকডাউন চললে কি করবে চালক শ্রমিকরা তা ভেবে পাচ্ছি না।

কাশিপুরের রিক্সাচালক মহসিন বলেন, ‘একজনের আয় দিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার চালানো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই কঠিন। এখন লকডাউনে আয়-রোজগার নেই। খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছে। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা, তাদের ওষুধও কিনতে পারছি না। কেউ সহযোগিতার কোনও হাত বাড়াচ্ছে না।’

নগরীর পলাশপুরের দিনমজুর আক্কাস মিয়া বলেন, ‘দিনমজুরি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনোভাবে চলে যেত। লকডাউনে কাজ নেই, ইনকামও নেই। খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ছোটো দুটি বাচ্চার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। গত বছর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছুটা সহযোগিতা পেলেও, এই লকডাউনে কিছুই পাচ্ছি না। কোনোরকম ধার-দেনা করে একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।’

বরিশাল রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে গত ১৪ এপ্রিল থেকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় নগরীর প্রায় ৫ হাজার রিক্সা চালক ও অন্যান্য শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। এ সকল চালক ও শ্রমিকের পরিবারের মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এসব দিনমজুরদের সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান নেতৃবৃন্দ।

ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী হানিফ জানান, ‘লকডাউনে ব্যবসার অবস্থা ভালো না। রাস্তায় লোকজন বের হতে না পারায় দুই একজন যাও আসে তারাও কেনা দামের চেয়ে কম বলে। ব্যবসার যা অবস্থা তাতে দৈনিক খাবার জুটাতেও কষ্ট হচ্ছে।’

এদিকে গত ১৭ এপ্রিল লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষের জন্য অর্থ বরাদ্দ ও রেশনিংয়ের দাবীতে বরিশালে রিক্সা নিয়ে মিছিল করেছে দিনমজুররা। মিছিলের পূর্বে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বলেন, লকডাউনে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অনতিবিলম্বে অর্থ বরাদ্দ ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু না হলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে।

1147 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন