২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা সুজন !

আপডেট: মে ১৭, ২০২১

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ বরিশালে ছাত্রলীগ নেতাকে হাতুড়ি পেটার ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় ২ অনুসারীকে গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতাসহ বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রেখেছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যার পর বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন তার সহযোগীদের নিয়ে সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়ার মোল্লাবাড়ি স্ট্যান্ডে লিটনের ইলেকট্রিক দোকানে হামলা চালায় এবং তাকে মারধর করে।

মোল্লাবাড়ি স্ট্যান্ডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার ছাত্র ফেডারেশনের সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগ কর্মী রাহাতের সঙ্গে সুজনের দেখা হয়। ওই সময় তার লোকজন রাহাতকে মারধর করে এবং সুজন হাতুড়ি দিয়ে তাকে পিটিয়ে আহত করে। রাহাতকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ধলু মোল্লা আহতের বরাত দিয়ে জানান, সুজনের আত্মীয় তুহিনের কাছে রাহাত কয়েক লাখ টাকা পায়। টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে আজকের এ ঘটনা।

প্রত্যক্ষ দর্শী মনির মোল্লা জানান, সুজন আর রাহাত বন্ধু, সুজনের লাহারহাটের টাউটারি ব্যাবসায় রাহাত সহ অনেকে মিলে ১০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করে। সেই টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে শত্রুতা শুরু হয়। এর ভিতরে সুজন বিয়ে করেছে তা এলাকাজুড়ে মানুষ জেনে গেছে। বিয়ের সময় রাহাত উপস্থিত ছিলো তাই ওকে সন্দেহ করে। সেখান থেকেই এই হামলা।

হামলার আগে সুজন হুন্ডার বহর নিয়ে মোল্লাবাড়ি স্টান্ডে এসে দোকান ভাংচুর করে। এরপর রাহাতের উপর হামলা করে। প্রথমে সুজন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এতে সামান্য ক্ষতি হয় রাহাতের। সাথে সাথে নিজেকে বাঁচাতে রাহাত সামনের দিকে অগ্রসর হলে সুজনের শ্যালক শুভর হাতুড়ির আঘাতে গুরতর আহত হলে রাহাত বেহুঁশ হয়ে পরে।

বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, ভোলার তুহিন নিঁখোজ, সেবিষয়ে রাহাতকে জিজ্ঞেস করি আমি। এতেই রাহাত ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে নানান স্টাটাস দিতে থাকে এবং আমি বিবাহিত না হওয়ার পরেও সকলকে বলে বেরায় আমি বিবাহিত।

রাহাত বন্ধু হওয়ায় তাকে ফেসবুকে মিথ্যাচার না করতে বলি। এরপর সে সন্ধ্যায় আমার উপর হামলা চালায়। আর হামলা চালাতে গিয়ে সে নিজেই রাস্তার উপর পরে আহত হয়ে আমার বিরুদ্ধে উল্টো মিথ্যাচার করছে। তার সঙ্গে আমার কোনো লেনদেনও নেই। এ বিষয়ে আমিও আইনের আশ্রয় নিব।’

এদিকে রাহাতের উপর হামলার ঘটনায় রাতেই বন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাহাতের বাবা খবির ডাক্তারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ নেতা সুজনসহ ৬জনকে আসামী করে ও অজ্ঞাত ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা গ্রহণ করে (মামলা নং-৬)। এবং সেই মামলায় সুজনের অনুসারী রুবেল ও মেহেদীকে গ্রেফতার করে বন্দর থানা পুলিশ।

 

রাহাতের বাবা জানান, দুইজন গ্রেফতার হলেও সুজনসহ মূল আসামীরা এখনও গ্রেফতার হয় নি। সুজন বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছেন। এতে আমাদের পরিবার জীবনশঙ্কায় ভুগছি।

বন্দর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, রাতে সংঘাতের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এবং রাহাতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল থেকে আমি বিষটি সুষ্ঠ তদন্তের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

এর পাশাপাশি উর্দ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাকি আসামীদের গ্রেফতারের জন্য আমরা অভিযান অব্যহত রেখেছি।’ আহত রাহাতের পরিবারের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার আরও বলেন, ‘অপরাধী সে যেই হোক কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, ছাত্রলী‌গনেতা আশিকুর রহমান সুজন নানা কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কিত। গত বছরের এপ্রিল মাসে তিনি নিজের ফেসবুক লাইভে এসে বরিশাল জেলা প্রশাসককে ‘বোকা ও আহাম্মক’ বলে গালি দেন। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় সদর উপজেলার চরকাউয়া পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের কর্মী জাফর ইকবাল, মাহফুজ, পরিতোষ ও সুমনকে মারধর করেন সুজন।

এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের এজিএম মানবেন্দ্র সরকার বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন।

এতে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ২৯ এপ্রিল আশিকুর রহমান সুজনকে বহিষ্কারের জন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে সুপারিশ করে চিঠি পাঠান। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারি আবার স্বপদে ফেরেন সুজন।

257 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন